ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে ৮ টি স্কিল যা না থাকলে সফলতা অসম্ভব

রবার্ট ফস্টার ব্যানেটের একটা অসাধারণ উক্তি যা আশা করি আমাদের সকলেরই জানা উচিৎ। 

“Success is not in what you have, but who you are”

হ্যা! আমরা বুঝে না বুঝে, কম বেশি সবাই এই জায়গাতে ভুল করে থাকি। আমাদের যা আছে তা নিয়েই আমরা ব্যতিব্যস্ত থাকি। কখনো নিজেকে বুঝার চেষ্টা করি না, একজন সফল ব্যক্তির যে গুণাবলী থাকা দরকার তা আমাদের মাঝে আছে কিনা?

এই গুণাবলী অর্জন করাটা অনেকাংশেই নির্ভর করে আমাদের কাজে কর্মে এবং স্বভাবে যা আমরা দৈনন্দিন জীবনে করে থাকি। 

একজন ফ্রিল্যান্সারের জীবনও কোন অংশে ব্যতিক্রম নয়। ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে সফল হতে হলে একজন ফ্রিল্যান্সারকে নিজের হার্ড স্কিলের পাশাপাশি এমন অনেক স্কিল আছে যা তাকে তার কাজের সার্থেই রপ্ত করতে হয় এবং এই স্কিলগুলো ছাড়া সফল হওয়া অসম্ভব।      

আপনারা অনেকেই হার্ড স্কিল এবং সফট স্কিল এই দুইটা বিশেষ টার্মের সাথে হয়তোবা পরিচিত। আর বর্তমানে হার্ড স্কিলের সাথে সাথে সফট স্কিলের গুরুত্ব কোন অংশেই কম নয়। 

বিশ্বের প্রায় ৯১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান সফট স্কিলে পারদর্শী লোক খুজে। শুধু তাই নয়, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যুক্তরাজ্যের ৯৭ শতাংশ চাকরিদাতা এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, সফট স্কিল তাদের ব্যবসায়িক উন্নতি এবং সাফল্যের প্রধান চাবিকাঠি।  

এখন অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, একজন ফ্রিল্যান্সারের এই হার্ড স্কিলের সাথে সফট স্কিলের সম্পর্কটা কি?

মনে করেন আপনি সফটওয়ার প্রোগ্রামার বা ওয়েব ডেভেলপার। আপনাকে অনেক ধরণের প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ, কোডিং, ফ্রেমওয়ার্ক আর ডাটা নিয়ে কাজ করতে হয়। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসের ক্যারিয়ার গঠনের জন্য এসব কাজ শিখছেন বা চর্চা করছেন। কিন্তু আপনার প্রবলেম সলভিং বা ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং নিয়ে কোন ধারণা নেই। আপনি জানেন না, কিভাবে ক্লায়েন্টের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হয় এবং কমিউনিকেশন মেইনটেইন করতে হয়। আপনি কাজ করছেন তো করছেন, সময় সীমাবদ্ধতা নিয়ে আপনার চিন্তা নেই। আপনি জানেন না ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে নিজেকে কিভাবে প্রমোট করতে হয়?

এসব খুটিনাটি বিষয়ের উপরও একজন ফ্রিল্যান্সারের সফলতা এবং ব্যর্থতা অনেকাংশে নির্ভর করে।      

তাই আজকের এই আর্টিকেলে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে ৮ টি স্কিল সম্পর্কে জানবো যা আমাদের ক্যারিয়ারের উন্নতি এবং সফলতার জন্য সহায়ক এবং একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে এই স্কীলগুলো রপ্ত বা আয়ত্ত্ব করা উচিৎ। 

সৃজনশীলতা 

বলা হয়ে থাকে রোবট এবং মেশিন দিয়ে যেকোন কাজ করানো সম্ভব। শুধু একটি মাত্র কাজ তাদের দ্বারা অসম্ভব তা হচ্ছে সৃষ্টিশীলতা এবং সৃজনশীলতা। কারণ মানুষের মত তাদের ইমাজিনেশন বা ভিজ্যুয়ালাইজ করার ক্ষমতা তাদের নেই বা কখনো হবে না।   

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটেপ্লেসে কাজ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই ক্রিয়েটিভ হতে হবে। একটা কথা সবসময় মাথায় রাখতে হবে, আপনি যদি আপনার সার্ভিস বাকি দশজনের চেয়ে একটু ব্যতিক্রম না করতে পারেন তবে আপনার ক্লায়েন্ট কেন আপনাকে হায়ার করবে?

এই ক্রিয়েটিভিটি যে কেবল একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার, ওয়েব বা ইউ এক্স ডিজাইনার এবং কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য প্রযোজ্য তা কিন্তু নয়। আপনি যেই সেক্টরেই কাজ করেন না কেন আপনার প্রত্যেকটা কাজে ক্রিয়েটিভ হওয়া উচিৎ।

Creativity

সেলস এবং নেগশিয়েশন দক্ষতা

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে একজন ক্লায়েন্টকে কনভিন্স করা যেমন কষ্টের তেমনি গুরুত্বপূর্ন। প্রতিটা বায়ার একে অপরের থেকে ভিন্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। আবার সবাইকে একই পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে কিন্তু কনভিন্স করা সম্ভব নয়। 

তাছাড়া আপনার মার্কেটিং এবং সেলস রিলেটেড কিছু দক্ষতার প্রয়োজন। যেখানে আপনি আপনার স্কিল বা সার্ভিস ক্লায়েন্টের সামনে কিভাবে উপস্থাপন করবেন? কিভাবে নিজের সার্ভিস অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে প্রমোট করবেন? আপনার স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং কি হওয়া উচিৎ? সেই সংক্রান্ত কিছু টিপস এন্ড ট্রিক্স জানা একান্ত জরুরী। বায়ারের বাজেটের উপর ভিত্তি করে আপনাকে তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে এবং সেখান থেকে সেলস জেনারেট করতে হবে।

ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের হিডেন সিক্রেট, টিপস এন্ড ট্রিক্স কোর্স যা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য হতে পারে সহায়ক।

যোগাযোগ দক্ষতা

পারসোনাল কিংবা প্রফেশনাল লাইফে একটা মানুষের জন্য কমিউনিকেশন স্কিল যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আসলে বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এই স্কিল ডেভেলপ করতে আমরা সবচেয়ে বেশি অপারগতা প্রকাশ করি। 

একজন ফ্রিল্যান্সার কখনোই সফল হবে না যদি না সে এই কমিউনিকেশনে এই দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। আমাদের সফলতার জন্য প্রধান অন্তরায় মানুষের সাথে কথা বলতে না পারা। 

আমরা অনেকেই বুঝে উঠতে পারি না কিভাবে কথোপকথন শুরু করতে হবে? বায়ারকে নিজের কাজের জন্য কিভাবে এপ্রোচ করতে হবে? কিভাবে লজিক্যাল ফ্যাক্ট এবং ডাটা প্রদর্শনের মাধ্যমে নিজের কাজের পারদর্শিকতা প্রকাশ করতে হবে? নিয়মিত বায়ারকে নিজের কাজের সম্পর্কে কিভাবে আপডেট দিবেন? কাজ শেষে বায়ারের ফিডব্যাক কিভাবে হ্যান্ডেল করবেন? কাজশেষে বায়ারের সাথে যোগাযোগ কিভাবে মেইনটেইন করবেন? সবকিছু সম্পর্কে জানতে হবে।

সময় ব্যবস্থাপনা

ফ্রিল্যান্সিং এর কাজের ধরণ যেহেতু অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক কাজের ধরণ থেকে একটু ভিন্ন সেক্ষেত্রে একজন ফ্রিল্যান্সারের সময় জ্ঞান থাকা তার ক্যারিয়ারের জন্য যে কতটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ তার কাজের জন্য কারোর কাছে জবাবদিহিতা করতে হয় না। হাজার ব্যস্ততার মাঝে তাকে সময়ের কাজ সময়ে করতে হয়। যেহেতু একজন ফ্রিল্যান্সার অফিসিয়াল পরিবেশে কাজ করতে পারে না। মাঝে মাঝে প্রডাকটিভিটি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। বিভিন্ন ধরণের স্ট্রেসের কারণের তার কাজের ব্যাঘাত ঘটতে পারে?

আবার এমনও না আপনি একটা কাজ অনেকক্ষন সময় নিয়ে করতে পারবেন। যা আপনার অন্যান্য কাজেও ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। যদিও আপনার স্কিল এবং অভিজ্ঞতা একটা ফ্যাকটর যেখানে আপনি কম সময়ে অনেক বেশি কাজ করতে পারবেন। 

সেক্ষেত্রে আপনার প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ট্যুল ব্যবহার করা উচিৎ। সেই প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ট্যুলে আপনার প্রতিদিনের টু-ডু লিস্ট সেট করা থাকলে তেমন ঝামেলা পোহাতে হবে না।

time management

বিশ্লেষণাত্মক এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা

এনালিটিক্যাল থিংকিং এবং ক্রিটিক্যাল থিংকিং যদিও একে অপরের থেকে একটু ভিন্ন। এনালিটিকাল থিংকিং হচ্ছে এই প্রচুর ডাটা এবং তথ্য যাচাই বাছাই করে আপনার যুক্তিসংগত কারণ সনাক্ত করতে হবে এবং তার থেকে উদ্ভূত ফলাফল নিয়ে আপনার কাজ করতে হবে। 

ক্রিটিক্যাল থিংকিং হচ্ছে সকল তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে আপনাকে আসল প্রব্লেম আইডেন্টিফাই করতে হবে এবং সেখান থেকে অল্টারনেটিভ সকল সলিউশন আপনাকে খুজে বের করতে হবে যা অনেকটা প্রব্লেম সলভিং স্কিল এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। 

যদিও ক্যারিয়ারের শুরুতে এর কোন প্রয়োজন নেই কিন্তু আপনি যদি আপনার ক্যারিয়ার উন্নতি এবং সাফল্য চান তবে এই প্রব্লেম সল্ভিং স্কিল আপনার অনেক কাজে দিবে। আর ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতেও এর চাহিদা ব্যাপক।       

নমনীয়তা এবং অভিযোজনযোগ্যতা

যে কোন পরিস্থিতিতেই নিজেকে খাপ খাওয়ানো আসলেই অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জিং। সারা বিশ্ব যেদিকে যেভাবে আগাচ্ছে আপনাকে ঠিক সেভাবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। যেকোন প্রফেশনাল মানুষদের কাজে টেকনোলজিক্যালি অনেক পরিবর্তন আসছে এবং আসবে। সেই সাথে আপনাকে খাপ খাওয়ায়ে চলতে হবে।    

তাছাড়া ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলো প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল সেই সাথে প্রতিযোগিতাও বেশি। মার্কেটপ্লেসের অবস্থার উপর নির্ভর করে আপনার স্ট্র্যাটেজিক মুভ করতে হবে। তা না হলে আপনি হারিয়ে যাবেন।  

সক্রিয় শিক্ষা 

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ করার সাথে সাথে আপনি অনেক অভিজ্ঞতার স্বীকার হবেন। সেই সাথে আপনি অনেক কিছু জানতে পারবেন শিখতে পারবেন। সেই শিক্ষা আপনার আজীবন কাজে দিবে। 

আপনার যদি ক্যারিয়ার উন্নতি এবং সাফল্যের ইচ্ছা থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার লার্নিং মাইন্ডসেট থাকতে হবে এবং সেই সাথে চর্চা করতে হবে।     

কাজের নৈতিকতা এবং দলগত কাজ

যেকোন প্রফেশনালদের জন্য ওয়ার্ক ইথিক্স অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার কাজে স্বচ্ছতা না থাকে তাহলে আপনি কখনো সফল হবেন না। সেই সাথে দলগত কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে। 

এখন আপনার প্রশ্ন হতে পারে আপনি তো একাই কাজ করছেন এখানে টিম ওয়ার্ক আসে কিভাবে? 

আসলে বায়ার আপনাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেয় ঠিকই কিন্তু আপনি যদি তার টিম মেম্বারের মত আচরণ করেন সেক্ষেত্রে কাজটা অনেক বেশি সহজতর হয়। ক্লায়েন্ট এবং আপনার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি কম হয়। আপনার মন মানসিকতার উপরে আসলে অনেক কিছুই নির্ভর করে।

 

পরিশেষে বলা চলা, ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে সফল হতে চাইলে আপনার যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে আপনার আত্মবিশ্বাস এবং মাইন্ডসেট। আপনি কি চান সেটা আগে ভাবুন এবং সিদ্ধান্ত নিন। যে সিদ্ধান্ত আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার সফল করতে অনেকটুকু সাহায্য করবে।   

 

Search

জনপ্রিয় কোর্সসমূহ

সাম্প্রতিক ব্লগসমূহ

× Whatsapp