ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করার সহজ ৭ টি ধাপ

সি এস লুইস- এর একটা চমৎকার উক্তি দিয়ে এই লেখাটি শুরু করতে চাই- 

You Are Never Too Old To Set Another Goal Or To Dream A New Dream.

অর্থাৎ আপনার বয়স যাই হোক না কেন বা আপনি যে পরিস্থিতেই থাকেন না কেন- আপনি আপনার স্বপ্ন পূরণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে পারেন সেই সময়, শক্তি এবং সামর্থ্য আপনার অবশ্যই আছে।

মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীনচেতা এবং স্বাধীনভাবে কাজ করতে সে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আর ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্রে এসকল সব সুবিধা উপভোগ করার সুযোগ এনে দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশেও ফ্রিল্যান্সিং এর সফলতা এবং উত্থান অনেকাংশে তা সত্য প্রমাণ করেছে। মানুষ এখন ৯ টা থেকে ৫টা জব কন্সেপ্ট থেকে অনেকটা দূরে সরে এসেছে। যেহেতু ৭ লক্ষাধিক ফ্রিল্যান্সার (সরকারী তথ্য অনুযায়ী) এখন ঘরে বসে উপার্জন করতে পারছেন তাহলে আপনি কেন পারবেন না?

প্রয়োজন শুধু প্রবল ইচ্ছাশক্তি, আত্ম বিশ্বাস এবং লেগে থাকার অদম্য প্রয়াস।   

এখন প্রশ্ন আসে, কিভাবে সম্ভব?

আমাদের দেশে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে এখনো অনেক ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে আছে। অনেক ধরণের প্রলোভন এবং প্রতারণার সংখ্যা কিন্তু নিতান্তই কম নয়। কিন্তু সহজ কিছু স্টেপ বা ধাপ অবলম্বন করেই আপনি শুরু করে দিতে পারেন আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার। 

তাই এই আর্টিকেলে আমরা উপস্থাপন করছি সেই সব স্টেপ বা ধাপ যা অনুসরণ করলেই পরে শুরু করে দিতে পারেন আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার।   

ধাপ-১ঃ লক্ষ্য নির্ধারণ 

স্টিভ জবসের যথার্থই বলেছেন- 

If You Are Working On Something That You Really Care About, You Don’t Have To Be Pushed. The Vision Pulls You.

আর ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গঠনে এই লক্ষ্য বা ভিশন থাকা অত্যন্ত জরুরি। যা আপনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। 

এখন আপনি কোন ডোমেইন নিজের দক্ষতা বাড়াতে চান? এবং তা দিয়ে  ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে যুক্ত হতে চান তা নিয়ে থাকতে হবে আপনার স্বচ্ছ জ্ঞান এবং ধারণা। সেই সাথে থাকতে হবে লাইফে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কৌশল।  

আপনি কি গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়ে কাজ করতে চান? সে গ্রাফিক্স ডিজাইনে কাজ করার জন্য আপনার যে ধরণের যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন তা আপনার আছে কিনা? আপনি সৃজনশীল কিনা? নতুন নতুন ইনোভেটিভ আইডিয়া এবং কনসেপ্ট নিয়ে কাজ করতে পারেন কিনা? কালার সেন্স থেকে শুরু করে ছোট খাটো খুটি নাটি বিষয় নিয়ে আপনার ধারণা এবং অভিজ্ঞতা আছে কিনা?

গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর বর্তমান মার্কেট কেমন? ভবিষ্যতে এই গ্রাফিক্স ডিজাইন আপনার ক্যারিয়ারে কোন কোন সেক্টরে প্রসার করতে সাহায্য করবে? 

যেমন অনেক ডিজাইনার দীর্ঘদিন গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করার পর মোশন গ্রাফিক্স, এনিমেশন সেকটরে তাদের ক্যারিয়ার প্রসার করে। 

এসবকিছু বিবেচনা করেই আপনার লক্ষ্য নির্ধারন করে হবে এবং স্বল্প মেয়াদী এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে।  

ধাপ-২ঃ প্রশিক্ষণ গ্রহন

অনেকেই যে ভুলটি সবচেয়ে বেশি করেন তা হচ্ছে কোন ধরণের প্রশিক্ষণ না নিয়ে মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে দেয় আবার কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কিভাবে কাজ করতে হয় তা না জেনে এপ্লাই করা শুরু করে দেন। এরপরে ঘটে নানা ধরণের বিপত্তি। অনেকেই প্রথম কাজের আশায় দিন পার করতে থাকে আর অনেকেই কাজ পেলেও সমস্যা হয় রিভিউ এবং বায়ার কমিউনিকেশনে।    

কারণ ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মেন্টরশীপ। যেখানে আপনাকে আপনার মেন্টর বা ট্রেইনার এর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে এবং সেই সাথে মেন্টর আপনাকে গ্রুমিং এবং গাইডলাইন প্রদানের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করতে পারেন। 

প্রত্যেকটা ট্রেইনিং প্ল্যাটফর্মে একটা কমিউনিটি থাকে যেখানে কাজের ক্ষেত্রে যে কোন ধরণের সমস্যা সমাধানে সেই কমিউনিটি একটা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। 

যদিও “উই মেইক প্রো”-এর কিছু ফ্রি কোর্স আছে যা আপনি করতে পারেন অনায়াসে। 

ধাপ-৩ঃ মার্কেটপ্লেস নির্ধারণ

ফ্রিল্যান্সিং এর শুরুতে মার্কেটপ্লেস নির্ধারণ অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং এবং অনেক সতর্কতার সাথে মুভ করতে হয়। সেক্ষেত্রে আপনাকে খুব বুঝে শুনে স্টেপ নিতে হবে। অনেক ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেস যেমনঃ ফাইবার, আপওয়ার্ক, পিপল পার আওয়ার, ফ্রিল্যান্সার আছে যাদের দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা যায়। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি এবং কাজের চাহিদা বুঝে প্ল্যান করতে হবে। তবে ফাইভার মার্কেটপ্লেস অনেক সহজ তাই অনেকেই ফাইভার মার্কেটপ্লেস দিয়ে তাদের ক্যারিয়ার শুরু করে। যদিও ফাইভারে রুলস রেগুলেশন একটু বেশি কঠোর। 

এই মার্কেটপ্লেসগুলোর ধরণ একে অপরের থেকে ভিন্ন তাই এগুলোতে কাজ করতে গেলে আপনাকে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। যেখানে আপওয়ার্কে আপনাকে কাজের জন্য আবেদন করতে হবে সেখানে ফাইভারে আপনাকে কাজের জন্য বায়ার আপনাকে হায়ার করবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে খুব দক্ষতা আর বিচক্ষণতার সাথে কাজ করতে হবে।  

ধাপ-৪ঃ পোর্টফলিও তৈরি এবং উপস্থাপন 

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট তৈরির সাথে সাথে যে বিষয়টি চলে আসে তা হচ্ছে পোর্টফোলিও তৈরি। প্রথম প্রথম নিজের পোর্টফলিও তৈরি করাটাও খুব বেশি চ্যালেঞ্জিং। প্রথমে নিজের পোর্টফোলিও কিভাবে বানাতে হবে তা অনেকেই বুঝতে পারে না। সেক্ষেত্রে আপনি লোকাল মার্কেটে কয়েকটা কাজ করে নিজের পোর্টফলিও ভারি করতে পারেন।    

নিজের পোর্টফোলিও কিভাবে তৈরি করবেন? কিভাবে আরো আকর্ষণীয় করবেন? অনেক টিপস এবং ট্রিক্স আছে যেগুলো আপনাকে জানতে হবে এবং সেইভাবে আপনার পোর্টফলিও গুছাতে হবে।  

ধাপ-৫ঃকাজ অনুসন্ধান এবং আবেদন

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে আপনাকে আপনার কাজের জন্য আবেদন করতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে কাজের অনুসন্ধান করতে হবে এবং সেই সাথে আবেদন করতে হবে। 

প্রথম কাজের ক্ষেত্রে আপনাকে খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং খুব সতর্কতার সাথে এপ্লাই করতে হবে। আপনি শুধু যে কাজে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ সেই কাজ নিয়ে কাজ করবেন। 

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে যে কোন কাজের দুইটা ধরণ  আছে। একটা হচ্ছে প্রজেক্ট এবং টাস্ক বেসিস আরেকটা হচ্ছে আওয়ারলি বেসিস। 

প্রথমে আপনি টাস্ক এবং প্রজেক্ট বেসিস কাজ দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারেন। যা ধীরে ধীরে আপনার কনফিডেন্স বাড়াতে সাহায্য করবে। 

এরপর ধীরে ধীরে আপনি আওয়ারলি বেসিসে কাজ শুরু করতে পারেন যখন আপনার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা বাড়বে।     

ধাপ-৬ঃ স্কিল এবং সার্ভিস বিক্রয়ের দক্ষতা অর্জন 

ফ্রিল্যান্সিং এ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি হচ্ছে নিজের সার্ভিস এবং স্কিল সফল্ভাবে প্রচার এবং তা থেকে সেলস জেনারেট করা। কিন্তু আমাদের অনেকেই এই বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকায় আমরা এই বিষয়ে ব্যাপক অনীহা উদাসীনতা কাজ করে। 

আমরা আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ থেকে শুরু করে স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং ঠিক মত করতে পারি না। সেক্ষেত্রে আমাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। 

সেক্ষেত্রে আমাদের এই কোর্সটি হতে পারে আপনার জন্য সহায়ক। 

ধাপ-৭ঃ প্রাইসিং এবং নেগোশিয়েশন  

শুরুর দিকে একজন ফ্রিল্যান্সারকে তার প্রাইসিং নিয়ে খুব বেশি ভাবতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। প্রথমের দিকে তার সার্ভিস চার্জ খুব বেশি কমানোও যাবে না আবার খুব বেশি বাড়ানো যাবে না এবং এই দুইটার মধ্যে একটা ভারসাম্য থাকতে হবে। আবার নিজে সামান্য সুবিধা এবং স্বার্থের লোভে মার্কেট নষ্ট করা যাবে না। আবার আপনার কম্পিটিটর প্রাইজ নজরে রাখতে হবে। 

বায়ার যদি আপনার প্রাইজে কাজ করতে না চায় তাহলে অবশ্যই আপনার নেগোশিয়েট করতে হবে। বায়ারকে এটাও বুঝাতে হবে কেন আপনি কাজটার জন্য যোগ্য। 

উপরে উল্লেখিত ধাপগুলো সহজেই পূরণের মাধ্যমে আপনি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করতে পারেন অনায়াসে।

Search

জনপ্রিয় কোর্সসমূহ

সাম্প্রতিক ব্লগসমূহ

× Whatsapp